Aparna Howlader
  • Home
  • Research
  • Academic Blog
  • Op-Eds
  • Bio

তৃতীয় পর্বঃ আন্ডারগ্র্যাডের ছাত্র হিসেবে করণীয় কি কি

1/15/2022

 
​আন্ডারগ্র্যাডের ছাত্র হিসেবে করণীয় কি কি, এটা লিস্ট ধরে বলা কঠিন। কিন্তু অনেক ছাত্রছাত্রী নতুন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঢুকে মানিয়ে নিতে পারে না, এবং পরে এই ঘোলাটে জায়গা থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে যায়। জীবনে সমস্যা আসবেই, কিন্তু সমস্যা সম্বন্ধে কিছু আইডিয়া থাকলে তা এড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। এই পোস্টের উদ্দেশ্য আমার নিজের জীবনের এবং আশেপাশের দেখা বন্ধুদের সমস্যা নিয়ে কথা খোলামেলা কথা বলা।  

যে সমস্যাগুলো মূলত হতে পারে - 

১) জীবনে প্রথম স্বাধীনতাঃ আমাদের অনেকের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকাটাই হোলো জীবনে প্রথম কিছুটা স্বাধীনতা পাওয়া। অনেকেই বাবামা এর বাসা থেকে হলে ওঠে এই প্রথমবার, সেটাও মানসিক চাপের কারণ হয়। হলের পরিবেশ বাংলাদেশে খুব নোংরা এবং ছাত্র-অবান্ধব, হলে থেকে ছাত্রজীবনকে সিস্টেমে রাখা কঠিন। 
২) নতুন পরিবেশঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ হাইস্কুল থেকে অনেক ভিন্ন। সারাদিন ক্লাস কোচিং এর চাপ থেকে বাইরে আসা হয়।  বাংলাদেশে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এটেন্ডেন্স নেওয়া হয় না। হলেও খুব কম পার্সেন্টেজে কাটিয়ে দেওয়া যায়। এই চাপ না থাকা অনেককেই ঘাবড়ে দেয়। 
৩) নতুন স্ট্রাগলঃ অনেকেই এমন সাবজেক্টে ভর্তি হয় যার আগে থেকে কোনো ধারণা থাকে না। এবং, ইন্টারেস্ট তৈরি করার মত কোনো ক্লাস বা প্রেরণা থাকে না বা খুঁজে নেওয়ার ইচ্ছা থাকে না। অনেক জায়গায় পরিবেশ (সতীর্থ/ শিক্ষক) এত বেশী টক্সিক থাকে যে মানিয়ে নেওয়ার চেয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া সহজ হয়ে যায়। 
৪) সাপোর্ট সিস্টেম না থাকাঃ অনেক ছাত্র নতুন পরিবেশে এসে মানিয়ে নিতে পারে না সাপোর্ট সিস্টেমের অভাবের কারণে। বলাই বাহুল্য, নতুন ছাত্রদের মোটিভেট করার জন্য আমাদের ইনক্লুসিভ কোনও ব্যবস্থা নেই। 
৫) স্ট্রাকচার না থাকাঃ বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তত আমার সময়ে স্ট্রাকচারের বিশাল অভাব ছিলো। একই ক্লাস তিন/চারবার শিক্ষক বদল করা হয়েছে, ক্লাসে মিডটার্ম নেওয়া কখনো হলেও খাতা কোনোদিন ফেরত দেওয়া হয় নাই। যেরকম সিস্টেমের ভেতর থেকে স্কুলকলেজে ছিলাম, তার থেকে পুরোই উলটো ছিলো। 
৬) শিক্ষকদের সাথে সম্পর্কঃ স্কুলে বা কলেজে শিক্ষকদের সাথে পারসোনাল সম্পর্ক থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সম্পর্ক খুব কম জায়গাতেই আছে। শিক্ষকদের ইনসেন্টিভ নেই, এত বড় ক্লাস সামলানোই কঠিন। শিক্ষকদের টিচিং এসিস্টেন্ট থাকে না, সুতরাং তাদের জন্যও কাজটা সহজ না। টিউটোরিয়াল ব্যবস্থা না থাকার কারণে কোনও সমস্যা হলেও তা সমাধানের উপায় পাওয়া যায় না। 
৭) রাজনীতি এবং অন্যান্য হাতছানিঃ এর পর বলাই বাহুল্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও অনেক এডমিনিস্ট্রেটিভ ফাঁকফোকর এর কারণে রাজনৈতিক দলের টানাটানি থাকে। টানাটানি না থাকলেও অনেকে দেশ বদলানোর সহজ উপায় হিসেবে রাজনীতিতে জড়িত হয়। এমন অনেক হাতছানির কারণে ছেলেমেয়েরা প্ল্যান করে আগাতে পারে না। প্ল্যানিং এ সাহায্য করার জন্য এডভাইজারও থাকে না কেউ। 
8) একবার পিছিয়ে পড়লে মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলাঃ এবং, সবচেয়ে বড় সমস্যা হোলো একবার পিছিয়ে পড়লে "আমাকে দিয়ে হবে না" এটা ধরে নিয়ে আমরা অনেকেই হাল ছেড়ে দেই। পড়াশোনার আগ্রহ চলে যায়, একটা কিছু দেখা যাবে এমন সাইকোলজিতে মানুষ চলে যায়। 
৯) টাকা রোজগারের হাতছানিঃ অনেক শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টার, টিউশনি ইত্যাদি চক্রে পড়ে এত বেশী সময় নষ্ট করে যেটা তার ক্যারিয়ারে বেশী একটা সাহায্য করে না। 

সমাধানের কিছু পথঃ 

১) এক্সপ্লোরঃ আন্ডারগ্র্যাডের সময়টা এক্সপ্লোর করতেই হবে, এক্সপ্লোর মানে বিভিন্ন পথে ইন্টারেস্ট আছে কিনা খুঁজে দেখা। এর জন্য ডিপার্ট্মেন্টে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ক্লাব, পত্রিকা ইত্যাদিতে সময় দেওয়া যায়। বিভিন্ন ক্লাস এটেন্ড করে কি ভালো লাগে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য বিভাগে ক্লাস করার দরজা বেশিরভাগ সময়েই খোলা থাকে, তাও করা যায় যদি ইন্টারেস্ট থাকে। 
২) এক্সপ্লোরেশনের ম্যাপিং: কিন্তু, এই এক্সপ্লোরেশন ম্যাপিং থাকতে হবে। আমি এক্সপ্লোর করতে গিয়ে যদি ক্লাবের পেছনে ১০০ ভাগ সময় দিয়ে দেই, তার কোনও অর্থ হয় না। এক্সপ্লোর করে কি শিখছি, সেটাই বড় কথা। 
৩) বুলিয়িং ভয় না পাওয়াঃ নতুন হলের পরিবেশ বা ডিপার্ট্মেন্টের পরিবেশে মানিয়ে নিতে না পারলে দোষের কিছু নেই। আমি পারসোনালি নিজেও অনার্সের আগে এত টক্সিক পরিবেশ দেখি নাই আশেপাশে। কিন্তু এর সাথেই টিকে থাকতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে যেন সস্তা প্রলোভনে আমরা নিজেরাও টক্সিক হয়ে না উঠি। এর বিপরীতে প্রধান যে কাজটা করা যায়, তা হোলো সমমনা বন্ধু খুঁজে বের করা। 
৪) হল পরিবেশ নিয়ে সতর্ক থাকাঃ বাংলাদেশে হলের অবস্থা অনেক খারাপ। প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে যেন একটা পড়াশোনার জায়গা থাকে। নিজের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতন থাকা দরকার। 
৫) স্টাডি পার্টনার বের করাঃ পড়াশোনায় ভালো করার এই পর্যায় থেকে সবচেয়ে উপাকারি উপায় হচ্ছে সমমনা একটিভ সহপাঠী খুঁজে বের করা। যেহেতু আমাদের টিউটোরিয়ালের ব্যবস্থা নেই, সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করেই সমস্যাগুলো বুঝতে হবে। সিনিয়র যারা ভালো করছে, তাদের থেকে সাহায্য নেওয়া যায়। নেটওয়ার্কিং খুব গুরুত্বপূর্ণ এই সময় থেকে। 
৬) বিভিন্ন লেখালেখিতে যুক্ত থাকা, এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিঃ আমি পারসোনালি মনে করি, এই বয়সের সবার কিছুটা বিশ্লেষণধর্মী লেখালেখির সাথে জড়িত থাকার অভ্যাস করা উচিত। আমি বিভিন্ন ছোটোখাটো পত্রিকায় ওইসময় লেখার সুযোগ পেয়েছিলাম, যেটা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছিলো আমি গবেষণা পছন্দ করি কিনা। আবার লেখালেখির মাধ্যমে পড়াশোনা পছন্দ করে এমন আরও মানুষের সাথে পরিচয় হয়। টেক্সটবুকের বাইরে পড়াশোনার ক্ষেত্র তৈরি হয়। 
৭) রাজনীতিঃ রাজনীতি সচেতন হতেই হবে সামাজিক বিজ্ঞানের ছাত্রদের। কিন্তু ছাত্ররাজনীতিতে একটিভ হওয়া বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সুফল নাও বয়ে আনতে পারে। খোঁজখবর রাখা, অবজার্ভ করাটা যদিও জরুরি। 
8) শিক্ষকদের সাথে সম্পর্কঃ যেসব শিক্ষক ছাত্রদের সাহায্য করতে চান তাদের সম্বন্ধে খোঁজখবর নেওয়া এবং একটিভলি তাদের সাথে নেটওয়ার্কিং করা। ভালো শিক্ষকেরা ভালো গাইডেন্স দিতে পারবেন, অনেক পথ খুলে যেতে পারে এই সম্পর্কগুলোর মাধ্যমে। 
৯) ক্যারিয়ার অপশন এক্সপ্লোরঃ আমাদের ছেলেমেয়েদের একটা প্রথম বড় সমস্যাই হচ্ছে আমরা প্রথম থেকে ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করি না। আমার ক্যারিয়ার অপশন কি কি - আমি কিভাবে নিজেকে তার জন্য প্রস্তুত করতে পারবো, এই চিন্তা প্রথম থেকেই থাকা উচিত।  
১০) স্কিল ডেভেলপমেন্টঃ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্তত সামাজিক বিজ্ঞানে স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিক থেকে বিশ্বমান থেকে অনেক পেছনে। আমি বাইরে আসার পর অনেক হোঁচট খেয়েছি কোনও প্রোগ্রামিং না জানার কারণে। ডাটা সফটওয়্যারগুলো চেনা, প্রোগ্রামিং শেখা, ইংরেজি স্পিকিং এবং রাইটিং এ সময় দেওয়া - এগুলো লং-টার্মে অনেক সাহায্য করবে। 
১১ ) ইন্টার্নশিপঃ সেকেন্ড ইয়ার থেকেই ইন্টার্নশিপ বা রিসার্চ এসিস্টেন্টশিপ খুঁজে দেখা উচিত। এই এক্সপেরিয়েন্স সিভিকে অনেক সাহায্য করবে। 
১২) ভলান্টিয়ারিং লিডারশীপ স্কিলঃ আরেকটা বড় ব্যাপার হচ্ছে লিডারশীপ স্কিল। সব বিভাগেই কিছু কাজ থাকে যাতে ছাত্রদের সাহায্য লাগে। কনফারেন্স অর্গানাইজ করা, সেমিনার দেখা, প্ল্যানিং করা - এইসব দক্ষতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 
১৩) কমিউনিটি মেম্বার হওয়াঃ উপরের সব পয়েন্ট যে কোনও সময় শেখা সম্ভব - যে একটি ব্যাপার একবার করে ফেললে আর বদলানো যায় না তা হোলো মানুষের সাথে ব্যবহার। যেমন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি কিভাবে ঢাকার ছেলেমেয়েরা মফস্বলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে হাসাহাসি করে সময় কাটায়। শর্ট টার্মে এতে অনেকসময় পপুলারিটি পাওয়া যেতেও পারে, কিন্তু অন্যকে ডিমোটিভেট করে আনন্দ পাওয়ার মত নোংরামি বন্ধ হওয়া উচিত। 

এই তিনটি পর্ব মোটামুটি সব ছাত্রের জন্যই লেখা। এর পরের কয়েকটা পর্ব শুধু অর্থনীতির ছাত্রদের জন্য থাকবে। 

Comments are closed.

    Author

    Sharing some suggestions and experiences for current Bangladeshi undergraduate students. All comments are my own, reflecting only my experience. 

    I will keep this in Bengali to make it easier for Bengali-speaking kids. 

    Archives

    August 2022
    July 2022
    January 2022

    Categories

    All

    RSS Feed

Powered by Create your own unique website with customizable templates.