এখন থেকে পর্বগুলো মূলত অর্থনীতির ছাত্রদের গবেষণাভিত্তিক ক্যারিয়ারের প্রেক্ষিতে লিখবো। কারণ এই ক্যারিয়ারটি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা বেশি। অন্যান্য ডিটেইলসে যাওয়ার আগে প্রথমে আলোচনা করা যাক কি কি ধরণের ক্যারিয়ার নিয়ে আমরা কথা বলছি।
অর্থনীতি বিভাগে ক্যারিয়ার হিসেবে যে দুইটি প্রধান হয়েছিলো সবসময়েই তা হোলো ঃ বিসিএস ক্যাডার এবং গবেষণাধর্মী কোনও কাজ। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য প্রায় সেকেন্ড বা থার্ড ইয়ার থেকেই ছেলেমেয়েরা বিসিএস এর প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করে। আমাদের ব্যাচ থেকে প্রায় ৩০ এর উপর ছাত্রছাত্রী বিসিএস ক্যাডার হয়েছিলো। এছাড়া অন্যান্য ক্যারিয়ারের মধ্যে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এবং ব্যাংকেও অনেকে গিয়েছিলো।
বাকি একটা বিশাল অংশ বিভিন্ন ধরণের গবেষণাকাজে জড়িত আছে। অর্থনীতি থেকে পড়াশোনা করে যে ধরণের গবেষণাকাজ পাওয়া সম্ভব, তার তালিকাটা এমন হবেঃ
১) রেজাল্ট খুব ভালো হলে পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে (নিজের ডিপার্টমেন্ট কিংবা অন্য কোথাও) লেকচারার হিসেবে জয়েন করা। লেকচারার অস্থায়ী চাকরি, কয়েক বছর পর সহকারী অধ্যাপক হওয়ার জন্য এপ্লাই করা যায়।
২) বিআইডিএস বা অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা।
৩) ব্র্যাক, সিপিডি, সানেম ইত্যাদি প্রাইভেট গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রিসার্চ এসোসিয়েট হিসেবে কাজ করা।
৪) এছাড়া দেশে আরও অনেক এনজিও এবং ছোটোখাটো গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে যাতে কাজ করা যায়।
গবেষণাতেই নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে চাইলে এর যে ধাপেই শুরু করা হোক না কেন, পিএইচডি আসলে মোটামুটি লাগবেই। আমি পারসোনালি মনে করি হায়ার স্টাডিজ এর জন্য যত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা যায়, ততই ভালো। মাস্টার্স, পিএইচডি মিলিয়ে অনেক স্টেপ যেতে হয়; আসার প্রিপারেশনও অনেক কঠিন। এর ধাপগুলো অনার্স চলাকালীন শুরু করলে সময় বাঁচে। যদি অনার্স চলাকালীন হায়ার স্টাডিজের জন্য এপ্লাই করতে হয় তবে ফোর্থ ইয়ারে থাকতে বা অনার্স পরীক্ষার পরপরই জিআরই, টোফেল দিয়ে এপ্লাই করতে হবে।
এই সিদ্ধান্তটা অনার্সের প্রথম তিন বছরের মধ্যেই তাই নিতে হবে। অনার্স শেষেই কি বাইরে এপ্লাই করবেন হায়ার স্টাডিজের জন্য নাকি আগে দেশে কিছুদিন চাকরি করে তারপর করবেন? সিদ্ধান্তটা থার্ড ইয়ারের মধ্যে নিয়ে নিলে প্রিপারেশন নিতে সুবিধা হবে।
আমি পারসোনালি মনে করি অনার্সের পরপর সময়টা এপ্লাই এর জন্য সবচেয়ে ভালো। একবার জবে ঢুকে গেলে জিআরই এর মত কঠিন পরীক্ষার পড়াশোনার সময় বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর হায়ার স্টাডিজ যদি করতেই হয়, তবে আগে থেকেই নয় কেন? স্টাডি গ্যাপ দেওয়ার ফলে বেনেফিট তো তেমন নেই। কিন্তু, পরিবেশ ও পরিস্থিতি ভেদে এই সিদ্ধান্ত ডিপেন্ড করবে। দেশে যদি কিছুদিন চাকরি করতেই হয়, তবে উপরে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো নামকরা।
সুতরাং, আমার হিসেবে টাইমলাইনটি এমন হতে পারেঃ থার্ড ইয়ার থেকে হায়ার স্টাডিজ এর খোঁজ খবর নেওয়া, শিক্ষকদের সাথে কথা বলা, স্কুল দেখা, বাইরে কোনও দেশে প্রেফারেন্স থাকলে তা ঠিক করা, জিআরই এবং টোফেলের জন্য বইপত্র জোগাড় করা এবং প্রিপারেশন নেওয়া কিছুটা করে, রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করে এক্সপেরিয়েন্স জোগাড় করা। এরপর, ফোর্থ ইয়ারে পরীক্ষা শেষ করে জিআরই দিয়ে দেওয়া। পরের বছর ফল সেমিস্টারে এপ্লাই করার জন্য কাগজপত্র ঠিক করা এবং এপ্লাই করা।
এরপরে এপ্লাই করতে চাইলেও টাইমলাইন প্রায় একই থাকবে। ইকনমিক্স এর ফান্ডিং মূলত ফল সেমিস্টারেই দেওয়া হয়।
তাহলে এখন প্রশ্ন আসে, এই সিদ্ধান্ত থার্ড ইয়ারের মধ্যে কিভাবে নেওয়া যায়? কিভাবে বুঝতে পারবো আমি গবেষণা করতে আগ্রহী কিনা। আমাদের যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাড গবেষণার রাস্তা প্রায় একটা নেই, তাই এর বেশিটাই নিজেকে বুঝে নিতে হবে। আমার মতে, কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিতঃ
রিসার্চের কাজের সাথে যতটা সম্ভব পরিচিত হওয়া। তারচেয়েও বড় কথা বোঝার চেষ্টা করা রিসার্চ আমার ভালো লাগছে কীনা। রিসার্চকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে হলে প্রচণ্ড প্যাশেন্ট মানুষ হতে হয়। পাঁচ/দশ বছর লাগিয়ে কিছু করার ধৈর্য সবার থাকে না, থাকতে হবে এমন কথাও নেই। কিন্তু যদি না থাকে, তাহলে এই লাইনে কাজ শুরু করলে ফ্রাসট্রেটেড হয়ে পড়তে হতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন ভালো লাগে কীনা? একটা বড় জিনিস হচ্ছে, “জানতে” ভালো লাগে কীনা। ধরুন, আমরা যেহেতু স্যোশাল সায়েন্সের কথা বলছি - দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে, বিভিন্ন মত - থিওরি জানতে কি আগ্রহ বোধ করছেন। তর্ক করতে এইসব বিষয়ে আগ্রহ বোধ করছেন? নীলক্ষেতে হাঁটার পথে হঠাত ইতিহাসের একটা বই দেখে কি আটকে যাচ্ছেন? বের করুন আপনার ক্যাম্পাসে অন্য কারা প্রবন্ধ/সাহিত্য চর্চা করে, এদের অনেকেই পত্রিকা, লিটল ম্যাগ বের করে। এইসব পত্রিকার সাথে কাজ করলে গবেষণার প্রতি আগ্রহ আসলেই পাচ্ছেন কীনা বুঝতে সাহায্য করতে পারে। ঢাকায় “হালখাতা” নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক আমাকে প্রতি তিন মাসে একটা এমন লিখতে দিতেন। আমি ঐ পত্রিকার প্রথম কয়েক সংখ্যায় সবচেয়ে জুনিয়র লেখক ছিলাম অনার্স পড়াকালীন সময়ে। লেখার বিষয়গুলো সব সামাজিক-রাজনৈতিক ছিলো। এই কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ তৈরি করে নিলে লং-টার্মে অনেক কাজে লাগতে পারে।
আপনার ফিল্ডে বড় কাজ কারা করছেন? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিসার্চার কারা? তাদের কাজ, পেপার-বই এসব যতটা সম্ভব জানার চেষ্টা করুন। আপনার ফিল্ডের বাইরে যারা একই বিষয়ে কাজ করেন, তাদেরটাও জানার চেষ্টা করুন। যেমন, আপনি অর্থনীতিতে পড়লে স্যোশিওলজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স এগুলো নিয়ে জানার চেষ্টা করুন। ইতিহাস বলতে কিছু আমাদের অর্থনীতি বিভাগে শেখানো হয় না, অথচ ইতিহাসকে বাদ দিলে অর্থনীতি চর্চাই করা সম্ভব না (well, I work on economic history, might be biased!)। আপনার ফিল্ডের লেটেস্ট ডেভেলপমেন্ট গুলো নিয়ে জানার চেষ্টা করুন, সেমিনার - ওয়ার্কশপ আশেপাশে কিছু হলে এটেন্ড করুন। কারো কাজ ভালো লাগলে বোঝার চেষ্টা করুন, কেন ভালো লাগছে। এই কাজের এক্সটেনশন কি হতে পারে?
আপনি গ্র্যাজুয়েট স্কুলে কাজ শুরু করলে প্রথম এক বছর শুধু সিলেবাস থাকবে। তার পর জ্ঞানের মহাসমুদ্রে আপনাকে ছেড়ে দিয়ে বলা হবে, নিজের রিসার্চ প্রশ্ন খুঁজে বের করে আনতে। আপনি আজকে যত বেশি পড়বেন, জানবেন, ওপেন চিন্তা করতে - নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে তৈরি থাকবেন, ততই ভালো রিসার্চের বিষয় খুঁজে বের করতে পারবেন। এটা একটা প্র্যাকটিস, নিজেকে সিস্টেমে রেখে চিন্তা করতে হবে। সামাজিক বিজ্ঞানে কাজ করার সুবিধা হোলো, অনেক প্রশ্ন আমাদের আশেপাশেই পড়ে আছে - শুধু দৃষ্টিশক্তি তৈরি হলেই দেখা সম্ভব। আর এইজন্য প্রয়োজন প্রতিনিয়ত নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়া। আপনি যখন একটা থিওরি পড়ছেন, ভাবার চেষ্টা করুন আশেপাশের কোন এক্সামপলগুলো দিয়ে এটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব। যেমন ধরুন, আপনি থিওরি পড়লেন মার্কেট রিলেটেড - যা পড়ছেন, তা দিয়ে বাংলাদেশের কাঁচাবাজারকে কি ব্যাখ্যা করতে পারবেন? এটাই চ্যালেঞ্জ। চোখকান খোলা রাখুন, এলার্ট থাকুন। একটা নোটবুক রাখুন প্রথম থেকেই যেখানে আইডিয়া লিখে রাখা যাবে।
কেবল রিসার্চ ভালো লাগলেই কিন্তু হবে না, নিজের ক্লাস - কোর্স এর মধ্যে ইন্টারেস্ট পাচ্ছেন কিনা এটাও বড় ব্যাপার। আন্ডারগ্র্যাডে রেজাল্ট ফার্স্ট বা ফিফথ বা টেনথ এর মধ্যে পরবর্তী জীবনে বেশি একটা পার্থক্য নেই, কিন্তু আপনি যদি একেবারেই আগ্রহ না পান কোনও ক্লাসে, সেটা হয়তো ইন্ডিকেট করবে এই বিষয়ে হায়ার স্টাডিজে আপনি আগ্রহী না। সেক্ষেত্রে, অন্য কোন বিষয়ে আপনি আগ্রহী, তা খুঁজে দেখা যেতে পারে।
অর্থনীতি বিভাগে ক্যারিয়ার হিসেবে যে দুইটি প্রধান হয়েছিলো সবসময়েই তা হোলো ঃ বিসিএস ক্যাডার এবং গবেষণাধর্মী কোনও কাজ। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য প্রায় সেকেন্ড বা থার্ড ইয়ার থেকেই ছেলেমেয়েরা বিসিএস এর প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করে। আমাদের ব্যাচ থেকে প্রায় ৩০ এর উপর ছাত্রছাত্রী বিসিএস ক্যাডার হয়েছিলো। এছাড়া অন্যান্য ক্যারিয়ারের মধ্যে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এবং ব্যাংকেও অনেকে গিয়েছিলো।
বাকি একটা বিশাল অংশ বিভিন্ন ধরণের গবেষণাকাজে জড়িত আছে। অর্থনীতি থেকে পড়াশোনা করে যে ধরণের গবেষণাকাজ পাওয়া সম্ভব, তার তালিকাটা এমন হবেঃ
১) রেজাল্ট খুব ভালো হলে পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে (নিজের ডিপার্টমেন্ট কিংবা অন্য কোথাও) লেকচারার হিসেবে জয়েন করা। লেকচারার অস্থায়ী চাকরি, কয়েক বছর পর সহকারী অধ্যাপক হওয়ার জন্য এপ্লাই করা যায়।
২) বিআইডিএস বা অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা।
৩) ব্র্যাক, সিপিডি, সানেম ইত্যাদি প্রাইভেট গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রিসার্চ এসোসিয়েট হিসেবে কাজ করা।
৪) এছাড়া দেশে আরও অনেক এনজিও এবং ছোটোখাটো গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে যাতে কাজ করা যায়।
গবেষণাতেই নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে চাইলে এর যে ধাপেই শুরু করা হোক না কেন, পিএইচডি আসলে মোটামুটি লাগবেই। আমি পারসোনালি মনে করি হায়ার স্টাডিজ এর জন্য যত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা যায়, ততই ভালো। মাস্টার্স, পিএইচডি মিলিয়ে অনেক স্টেপ যেতে হয়; আসার প্রিপারেশনও অনেক কঠিন। এর ধাপগুলো অনার্স চলাকালীন শুরু করলে সময় বাঁচে। যদি অনার্স চলাকালীন হায়ার স্টাডিজের জন্য এপ্লাই করতে হয় তবে ফোর্থ ইয়ারে থাকতে বা অনার্স পরীক্ষার পরপরই জিআরই, টোফেল দিয়ে এপ্লাই করতে হবে।
এই সিদ্ধান্তটা অনার্সের প্রথম তিন বছরের মধ্যেই তাই নিতে হবে। অনার্স শেষেই কি বাইরে এপ্লাই করবেন হায়ার স্টাডিজের জন্য নাকি আগে দেশে কিছুদিন চাকরি করে তারপর করবেন? সিদ্ধান্তটা থার্ড ইয়ারের মধ্যে নিয়ে নিলে প্রিপারেশন নিতে সুবিধা হবে।
আমি পারসোনালি মনে করি অনার্সের পরপর সময়টা এপ্লাই এর জন্য সবচেয়ে ভালো। একবার জবে ঢুকে গেলে জিআরই এর মত কঠিন পরীক্ষার পড়াশোনার সময় বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর হায়ার স্টাডিজ যদি করতেই হয়, তবে আগে থেকেই নয় কেন? স্টাডি গ্যাপ দেওয়ার ফলে বেনেফিট তো তেমন নেই। কিন্তু, পরিবেশ ও পরিস্থিতি ভেদে এই সিদ্ধান্ত ডিপেন্ড করবে। দেশে যদি কিছুদিন চাকরি করতেই হয়, তবে উপরে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো নামকরা।
সুতরাং, আমার হিসেবে টাইমলাইনটি এমন হতে পারেঃ থার্ড ইয়ার থেকে হায়ার স্টাডিজ এর খোঁজ খবর নেওয়া, শিক্ষকদের সাথে কথা বলা, স্কুল দেখা, বাইরে কোনও দেশে প্রেফারেন্স থাকলে তা ঠিক করা, জিআরই এবং টোফেলের জন্য বইপত্র জোগাড় করা এবং প্রিপারেশন নেওয়া কিছুটা করে, রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করে এক্সপেরিয়েন্স জোগাড় করা। এরপর, ফোর্থ ইয়ারে পরীক্ষা শেষ করে জিআরই দিয়ে দেওয়া। পরের বছর ফল সেমিস্টারে এপ্লাই করার জন্য কাগজপত্র ঠিক করা এবং এপ্লাই করা।
এরপরে এপ্লাই করতে চাইলেও টাইমলাইন প্রায় একই থাকবে। ইকনমিক্স এর ফান্ডিং মূলত ফল সেমিস্টারেই দেওয়া হয়।
তাহলে এখন প্রশ্ন আসে, এই সিদ্ধান্ত থার্ড ইয়ারের মধ্যে কিভাবে নেওয়া যায়? কিভাবে বুঝতে পারবো আমি গবেষণা করতে আগ্রহী কিনা। আমাদের যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাড গবেষণার রাস্তা প্রায় একটা নেই, তাই এর বেশিটাই নিজেকে বুঝে নিতে হবে। আমার মতে, কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিতঃ
রিসার্চের কাজের সাথে যতটা সম্ভব পরিচিত হওয়া। তারচেয়েও বড় কথা বোঝার চেষ্টা করা রিসার্চ আমার ভালো লাগছে কীনা। রিসার্চকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে হলে প্রচণ্ড প্যাশেন্ট মানুষ হতে হয়। পাঁচ/দশ বছর লাগিয়ে কিছু করার ধৈর্য সবার থাকে না, থাকতে হবে এমন কথাও নেই। কিন্তু যদি না থাকে, তাহলে এই লাইনে কাজ শুরু করলে ফ্রাসট্রেটেড হয়ে পড়তে হতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন ভালো লাগে কীনা? একটা বড় জিনিস হচ্ছে, “জানতে” ভালো লাগে কীনা। ধরুন, আমরা যেহেতু স্যোশাল সায়েন্সের কথা বলছি - দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে, বিভিন্ন মত - থিওরি জানতে কি আগ্রহ বোধ করছেন। তর্ক করতে এইসব বিষয়ে আগ্রহ বোধ করছেন? নীলক্ষেতে হাঁটার পথে হঠাত ইতিহাসের একটা বই দেখে কি আটকে যাচ্ছেন? বের করুন আপনার ক্যাম্পাসে অন্য কারা প্রবন্ধ/সাহিত্য চর্চা করে, এদের অনেকেই পত্রিকা, লিটল ম্যাগ বের করে। এইসব পত্রিকার সাথে কাজ করলে গবেষণার প্রতি আগ্রহ আসলেই পাচ্ছেন কীনা বুঝতে সাহায্য করতে পারে। ঢাকায় “হালখাতা” নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক আমাকে প্রতি তিন মাসে একটা এমন লিখতে দিতেন। আমি ঐ পত্রিকার প্রথম কয়েক সংখ্যায় সবচেয়ে জুনিয়র লেখক ছিলাম অনার্স পড়াকালীন সময়ে। লেখার বিষয়গুলো সব সামাজিক-রাজনৈতিক ছিলো। এই কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ তৈরি করে নিলে লং-টার্মে অনেক কাজে লাগতে পারে।
আপনার ফিল্ডে বড় কাজ কারা করছেন? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিসার্চার কারা? তাদের কাজ, পেপার-বই এসব যতটা সম্ভব জানার চেষ্টা করুন। আপনার ফিল্ডের বাইরে যারা একই বিষয়ে কাজ করেন, তাদেরটাও জানার চেষ্টা করুন। যেমন, আপনি অর্থনীতিতে পড়লে স্যোশিওলজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স এগুলো নিয়ে জানার চেষ্টা করুন। ইতিহাস বলতে কিছু আমাদের অর্থনীতি বিভাগে শেখানো হয় না, অথচ ইতিহাসকে বাদ দিলে অর্থনীতি চর্চাই করা সম্ভব না (well, I work on economic history, might be biased!)। আপনার ফিল্ডের লেটেস্ট ডেভেলপমেন্ট গুলো নিয়ে জানার চেষ্টা করুন, সেমিনার - ওয়ার্কশপ আশেপাশে কিছু হলে এটেন্ড করুন। কারো কাজ ভালো লাগলে বোঝার চেষ্টা করুন, কেন ভালো লাগছে। এই কাজের এক্সটেনশন কি হতে পারে?
আপনি গ্র্যাজুয়েট স্কুলে কাজ শুরু করলে প্রথম এক বছর শুধু সিলেবাস থাকবে। তার পর জ্ঞানের মহাসমুদ্রে আপনাকে ছেড়ে দিয়ে বলা হবে, নিজের রিসার্চ প্রশ্ন খুঁজে বের করে আনতে। আপনি আজকে যত বেশি পড়বেন, জানবেন, ওপেন চিন্তা করতে - নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে তৈরি থাকবেন, ততই ভালো রিসার্চের বিষয় খুঁজে বের করতে পারবেন। এটা একটা প্র্যাকটিস, নিজেকে সিস্টেমে রেখে চিন্তা করতে হবে। সামাজিক বিজ্ঞানে কাজ করার সুবিধা হোলো, অনেক প্রশ্ন আমাদের আশেপাশেই পড়ে আছে - শুধু দৃষ্টিশক্তি তৈরি হলেই দেখা সম্ভব। আর এইজন্য প্রয়োজন প্রতিনিয়ত নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়া। আপনি যখন একটা থিওরি পড়ছেন, ভাবার চেষ্টা করুন আশেপাশের কোন এক্সামপলগুলো দিয়ে এটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব। যেমন ধরুন, আপনি থিওরি পড়লেন মার্কেট রিলেটেড - যা পড়ছেন, তা দিয়ে বাংলাদেশের কাঁচাবাজারকে কি ব্যাখ্যা করতে পারবেন? এটাই চ্যালেঞ্জ। চোখকান খোলা রাখুন, এলার্ট থাকুন। একটা নোটবুক রাখুন প্রথম থেকেই যেখানে আইডিয়া লিখে রাখা যাবে।
কেবল রিসার্চ ভালো লাগলেই কিন্তু হবে না, নিজের ক্লাস - কোর্স এর মধ্যে ইন্টারেস্ট পাচ্ছেন কিনা এটাও বড় ব্যাপার। আন্ডারগ্র্যাডে রেজাল্ট ফার্স্ট বা ফিফথ বা টেনথ এর মধ্যে পরবর্তী জীবনে বেশি একটা পার্থক্য নেই, কিন্তু আপনি যদি একেবারেই আগ্রহ না পান কোনও ক্লাসে, সেটা হয়তো ইন্ডিকেট করবে এই বিষয়ে হায়ার স্টাডিজে আপনি আগ্রহী না। সেক্ষেত্রে, অন্য কোন বিষয়ে আপনি আগ্রহী, তা খুঁজে দেখা যেতে পারে।