বাংলাদেশে - এবং বাংলাদেশের মত অনেক ডেভেলপিং কান্ট্রিতেই, পরিবার এবং বিদ্যালয় থেকে obsessed এর মত কিছু বিশেষ ক্যারিয়ার অপশনকে জন্মাবধি আওড়ানো হয়। obsess এর বাংলা যাই হোক, যে আচরণের কথা আমি বলছি, আমাদের পরিবারগুলোতে সবাই জানে তার সীমা কতটা পাগলামিতে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। বাচ্চাদের ধরে ধরে জিজ্ঞেস করা হয়, "তুমি ডাক্তার হতে চাও নাকি ইঞ্জিনিয়ার?"। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার এর বাইরে বাংলাদেশি পরিবারগুলো গত দুই দশকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কল্যাণে আরও চিনেছে বিবিএ। এর বাইরে কোনও প্রফেশনাল চয়েসে আমাদের ছেলেমেয়েদের এক্সপোজারই তেমন হয় না। এবং, কেউ কেউ কিছুটা এর বাইরে বের হলে সেটাকে হাস্যকর/কৌতুক এর বিষয় বানিয়ে ফেলা হয়।
এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমার এই ব্লগ সিরিজের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের কিশোর-তরুণদের কাছে ক্যারিয়ার অলটারনেটিভ হিসেবে সোশ্যাল সায়েন্সের ভালোমন্দ দিকগুলো কিছুটা তুলে ধরা। আমার টার্গেটেড পাঠকগোষ্টী মূলত ক্লাস এইট থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত। তবে, আশা করছি, এর কিছু অংশ অনার্স পড়ুয়া যে কোনও শিক্ষার্থীরও কাজে লাগবে।
"সামাজিক বিজ্ঞান" মূলত অনেকগুলো স্পেশালাইজেশনের একটি কালেকশন। বাইরের দেশে একে "কলেজ" এবং বাংলাদেশে "ফ্যাকাল্টি" বলা হয়। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যোশাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির মধ্যে আছে বর্তমানে ১৬ টি বিভাগ। অর্থনীতি, রাজনৈতিক বিজ্ঞান, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন, সমাজবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিভাগগুলো স্যোশাল সায়েন্সের মধ্যে পরে। কিন্তু, এটাও মনে রাখতে হবে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এই সাবজেক্টগুলো লিব্যারেল আর্টসের মধ্যে পরে। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সটি যে কারণে "মাস্টার্স ইন স্যোশাল সায়েন্স", কিন্তু পরবর্তীতে আমার সাইমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটির মাস্টার্সটি "মাস্টার্স ইন আর্টস" এর সার্টিফিকেট দিয়েছে। এই তথ্যটা উল্লেখ করার কারণ, এই পার্থক্যগুলো এত পরিষ্কার না কিন্তু। এবং, তাতে কিছু যায়ও আসে না। যেমন, লিটারেচার মূলত সব জায়গাতেই আর্টস এর মধ্যে পরে (কলা বিভাগ), কিন্তু যখন সেই লিটারেচারের মধ্যেই কিভাবে সমাজকে, সমাজের বিবর্তনকে দেখা হবে - এই প্রশ্ন আসলে তাকে স্যোশাল সায়েন্স বলা যায়। আবার ইতিহাস বিভাগ হিসেবে কলাবিভাগের মধ্যে, কিন্তু অর্থনৈতিক ইতিহাস সাবজেক্টটি অর্থনীতির শাখা হিসেবেই অনেক জায়গায় পড়ানো হয়। আবার, অনেক জায়গায়, অর্থনীতি বিজনেস ফ্যাকাল্টিতেও পড়ানো হয়। যেমন বললাম, এই লাইনগুলো সাদাকালো হিসেবে আলাদা করা কঠিন। আমরা ক্যাটাগরিক্যালি স্যোশাল সায়েন্স রিলেটেড সবটা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবো।
একটা ওভারভিউ দিয়ে শুরু করা যাক। প্রথমে, অর্থনীতি নিয়েই - যেহেতু আমার পড়াশোনা অর্থনীতিতে। টেক্সটবুক ডেফিনিশন হবে: অর্থশাস্ত্র দ্রব্য এবং সেবার ভোগ, উৎপাদন, এবং বণ্টন নিয়ে কাজ করে। এই বাক্যের অর্থ বোঝা বেশ কঠিন, তাই ভাগ করা যাক। ভোগ - consumption - হচ্ছে প্রতিদিন আমরা যা যা ব্যবহার করি, কিছু না কিছু প্রয়োজনে। যেমন, আমি ভাত কিনে ভাত খাই - আমি ভাত consume করি বাজার থেকে মূল্য দিয়ে কিনে এনে। আবার, আমি স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করি। এখানে, আমি স্কুলে বেতন দিয়ে এডুকেশন consume করি। অন্যদিকে, production হচ্ছে আমি বাজার থেকে জিনিস কিনতে টাকা পাওয়ার জন্য যা যা করি। এটা হতে পারে, আমি শিক্ষকতা করি - তাহলে আমি এডুকেশন প্রোডিউস করি। আবার, আমি ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংকের সেবা (সার্ভিস) নেই। এই সম্পূর্ণ সার্কেল - আমি কি ভোগ করি, কি উৎপাদন করি, কি সেবা নেই - এই নিয়েই অর্থনীতির আলোচনা। আবার, এখানে আমার বদলে যদি একটি দেশ হয় - দেশ তার সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে যা উৎপাদন, ভোগ এবং বণ্টন করে। একা আমি বা পুরো দেশের বাইরে, চিন্তা করা যেতে পারে, একটি গ্রাম বা একটি জেলা, কিংবা পুরো সাউথ এশিয়া নিয়ে। এক কথায় এখন - সীমিত সম্পদ কিভাবে ব্যবহার করে সর্বোচ্চ উৎপাদন/ভোগ করা যায়, তাই নিয়েই অর্থনীতির আলোচনা। উদাহরণ দিচ্ছি আমার নিজের গবেষণা থেকে। আমার স্পেশালাইজেশন "এনভায়রনমেন্টাল ইকনমিক্স"। আমার পিএইচডি থিসিসে আমি কিভাবে সরকারি পলিসির কারণে মানুষ পরিবেশের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ বা লাভবান হয়, তা নিয়ে আলোচনা করা। আমি ডাটা থেকে বের করার চেষ্টা করি যে কোনও একটি পরিবেশজনিত পলিসি দ্বারা মানুষের ভালোমন্দ কিছু এফেক্ট হয় কিনা। আমার কাজ পুরোই তথ্যভিত্তিক - এপ্লাইড ইকনমিক্স যেটাকে বলে।
অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রের কাজ হচ্ছে মানুষ এবং সমাজের উন্নয়ন, গঠন এবং কাঠামো নিয়ে আলোচনা করা। বোঝার চেষ্টা করা মানুষ কেন ইন্টারেক্ট করে, কিভাবে করে, বৈষম্য কিভাবে কাজ করে সমাজে, বিভিন্ন উন্নয়নের ফলে সমাজে কি পরিবর্তন হয় ইত্যাদি। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা যেমন অপরাধ বেড়ে যাওয়া, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বেড়ে যাওয়া, নারী-পুরুষের বৈষম্যের কারণে কি কি সমস্যা তৈরি হয় - এই নিয়েও সমাজবিজ্ঞান কাজ করে। এরপরে, পলিটিক্যাল সায়েন্সের কাজ হচ্ছে রাষ্ট্র, স্টেট, লোকাল ইত্যাদি সব লেভেলের রাজনৈতিক ইন্টারেকশন নিয়ে কাজ করা। একটা বিশাল অংশ মূলত পার্টিশান ইনভলভমেন্ট নিয়ে কাজ করে। আবার, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন মূলত রাষ্ট্রে বিভিন্ন এফেয়ার কিভাবে ব্যবস্থা করা হবে, পাবলিক পলিসি কিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এই নিয়ে আলোচনা করে। অন্যান্য স্যোশাল সায়েন্সের বিশাল অংশ মূলত সমাজবিজ্ঞান এর থেকে বের হয়ে তৈরি হওয়া স্পেশালাইজেশন।
অনেকক্ষেত্রেই মনে হতে পারে, ইকনমিক্স, স্যোশিওলজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স এর অনেক গবেষণাক্ষেত্রই একে অপরের সাথে জড়িত। এর কারণটা সোজা, সমাজ অবিচ্ছিন্ন একটা কাঠামো - স্যোশাল সায়েন্স এর বিভিন্ন অংশকেই বোঝার চেষ্টা করে। তাই, আমার কারেন্ট ইকনমিক্সে প্রজেক্টে যখন আমি ভোটিং বিহেভিয়ার বোঝার চেষ্টা করছি, তখন একে ইকনমিক্স বা পলিটীক্যাল সায়েন্স দুইদিকেই প্লেস করা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু, এই প্রতিটি সাবজেক্টের আলাদা আলাদা Toolbox আছে। আমি যখন মূলত ইকনমিক্সের Toolbox ব্যবহার করবো, তখন একে মূলত ইকনমিক্স বলা হবে। আর এই Toolbox এ কি কি আছে, সেটাই শেখানো হয় এই সাবজেক্টগুলোতে। যেমন, ইকনমিক্স অন্যান্য স্যোশাল সায়েন্সের থেকে অনেক বেশি কোয়ান্টিটেটিভ। ম্যাথ এবং পরিসংখ্যানের বিশাল ব্যবহার ইকনমিক্সে করা হয়, যেটা অন্যান্য স্যোশাল সায়েন্সে কম। ক্যারিয়ারক্ষেত্রেও এই সাবজেক্টগুলোর অনেক ওভারল্যাপ আছে।
সামাজিক বিজ্ঞানের বিভাগগুলোর শর্ট ইন্ট্রোডাকশনের পর স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রদের প্রশ্ন আসবে - এইসব বিষয়ে পড়ে কি কি ক্যারিয়ার চয়েস সামনে খোলা থাকবে? জীবনের একটা বিশাল অংশ জুড়েই থাকবে "কাজ", সেই কাজের আনন্দের জন্য একটা যুতসই ক্যারিয়ার খুব জরুরি। ক্যারিয়ার হওয়া উচিত এমন একটা কাজ যা প্রতিদিন নতুন কিছু শেখাবে, যা করতে ভালো লাগবে। দেখা যাক, স্যোশাল সায়েন্স আমাদের কি কি ক্যারিয়ারের দিকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে স্যোশাল সায়েন্সে কাজের ক্ষেত্রগুলো নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করছি।
প্রথমত, একাডেমিকঃ বিশ্ববিদ্যালয়-লেভেলে শিক্ষকতা করা যায়। এর জন্য দেশে কেবল অনার্স বা মাস্টার্স লাগে। কিন্তু বাইরের দেশগুলোতে পিএইচডি এবং আরও বেশি (পোস্টডক) থাকা লাগে। পাবলিকেশনের প্রয়োজন হয়।
দ্বিতীয়ত, ডেভেলপমেন্ট সেক্টরঃ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএনডিপি ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্যোশাল সায়েন্সের বিভিন্ন সেক্টরের মানুষের ডিমান্ড অনেক বেশি। এইসব চাকরির ক্ষেত্রেও বেশিরভাগ সময়েই পিএইচডি প্রয়োজন হবে। কিছু জুনিয়র লেভেলে শুধু মাস্টার্স যথেষ্ট।
তৃতীয়ত, এনজিও সেক্টরঃ দেশে এবং বাইরে এনজিও সেক্টরে কনসালটেন্সি করা অনেকেরই প্রথম পছন্দ থাকে। প্ল্যানিং বিষয়ক অন্যান্য চাকরিতেও স্যোশাল সায়েন্সের অনেক ডিমান্ড।
চতুর্থত, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিঃ ফাইন্যান্সিয়াল এনালিস্ট ধরণের অনেক জবে ইকনমিস্টদের ডিমান্ড থাকে।
পঞ্চম, ব্যাংকিংঃ সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকিং সেক্টরে ইকনমিক্সের ছাত্রদের ডিমান্ড অনেক বেশি।
ষষ্ঠঃ সরকারি চাকরি: সরকারি চাকরি এবং আধা-সরকারি চাকরিতে স্যোশাল সায়েন্সের অনেক ছাত্রই যায়। বাংলাদেশের অনেক নামকরা স্যোশাল সায়েন্টিস্টই সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, এবং পাবলিক পলিসিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
সপ্তম, ইন্ডাস্ট্রি জবঃ ইন্ডাস্ট্রিতে জব করা অনেকেরই প্রধান লক্ষ্য থাকে। ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসেবেও অনেকে কাজ করতে পছন্দ করেন।
এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমার এই ব্লগ সিরিজের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের কিশোর-তরুণদের কাছে ক্যারিয়ার অলটারনেটিভ হিসেবে সোশ্যাল সায়েন্সের ভালোমন্দ দিকগুলো কিছুটা তুলে ধরা। আমার টার্গেটেড পাঠকগোষ্টী মূলত ক্লাস এইট থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত। তবে, আশা করছি, এর কিছু অংশ অনার্স পড়ুয়া যে কোনও শিক্ষার্থীরও কাজে লাগবে।
"সামাজিক বিজ্ঞান" মূলত অনেকগুলো স্পেশালাইজেশনের একটি কালেকশন। বাইরের দেশে একে "কলেজ" এবং বাংলাদেশে "ফ্যাকাল্টি" বলা হয়। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যোশাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির মধ্যে আছে বর্তমানে ১৬ টি বিভাগ। অর্থনীতি, রাজনৈতিক বিজ্ঞান, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন, সমাজবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিভাগগুলো স্যোশাল সায়েন্সের মধ্যে পরে। কিন্তু, এটাও মনে রাখতে হবে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এই সাবজেক্টগুলো লিব্যারেল আর্টসের মধ্যে পরে। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সটি যে কারণে "মাস্টার্স ইন স্যোশাল সায়েন্স", কিন্তু পরবর্তীতে আমার সাইমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটির মাস্টার্সটি "মাস্টার্স ইন আর্টস" এর সার্টিফিকেট দিয়েছে। এই তথ্যটা উল্লেখ করার কারণ, এই পার্থক্যগুলো এত পরিষ্কার না কিন্তু। এবং, তাতে কিছু যায়ও আসে না। যেমন, লিটারেচার মূলত সব জায়গাতেই আর্টস এর মধ্যে পরে (কলা বিভাগ), কিন্তু যখন সেই লিটারেচারের মধ্যেই কিভাবে সমাজকে, সমাজের বিবর্তনকে দেখা হবে - এই প্রশ্ন আসলে তাকে স্যোশাল সায়েন্স বলা যায়। আবার ইতিহাস বিভাগ হিসেবে কলাবিভাগের মধ্যে, কিন্তু অর্থনৈতিক ইতিহাস সাবজেক্টটি অর্থনীতির শাখা হিসেবেই অনেক জায়গায় পড়ানো হয়। আবার, অনেক জায়গায়, অর্থনীতি বিজনেস ফ্যাকাল্টিতেও পড়ানো হয়। যেমন বললাম, এই লাইনগুলো সাদাকালো হিসেবে আলাদা করা কঠিন। আমরা ক্যাটাগরিক্যালি স্যোশাল সায়েন্স রিলেটেড সবটা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবো।
একটা ওভারভিউ দিয়ে শুরু করা যাক। প্রথমে, অর্থনীতি নিয়েই - যেহেতু আমার পড়াশোনা অর্থনীতিতে। টেক্সটবুক ডেফিনিশন হবে: অর্থশাস্ত্র দ্রব্য এবং সেবার ভোগ, উৎপাদন, এবং বণ্টন নিয়ে কাজ করে। এই বাক্যের অর্থ বোঝা বেশ কঠিন, তাই ভাগ করা যাক। ভোগ - consumption - হচ্ছে প্রতিদিন আমরা যা যা ব্যবহার করি, কিছু না কিছু প্রয়োজনে। যেমন, আমি ভাত কিনে ভাত খাই - আমি ভাত consume করি বাজার থেকে মূল্য দিয়ে কিনে এনে। আবার, আমি স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করি। এখানে, আমি স্কুলে বেতন দিয়ে এডুকেশন consume করি। অন্যদিকে, production হচ্ছে আমি বাজার থেকে জিনিস কিনতে টাকা পাওয়ার জন্য যা যা করি। এটা হতে পারে, আমি শিক্ষকতা করি - তাহলে আমি এডুকেশন প্রোডিউস করি। আবার, আমি ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংকের সেবা (সার্ভিস) নেই। এই সম্পূর্ণ সার্কেল - আমি কি ভোগ করি, কি উৎপাদন করি, কি সেবা নেই - এই নিয়েই অর্থনীতির আলোচনা। আবার, এখানে আমার বদলে যদি একটি দেশ হয় - দেশ তার সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে যা উৎপাদন, ভোগ এবং বণ্টন করে। একা আমি বা পুরো দেশের বাইরে, চিন্তা করা যেতে পারে, একটি গ্রাম বা একটি জেলা, কিংবা পুরো সাউথ এশিয়া নিয়ে। এক কথায় এখন - সীমিত সম্পদ কিভাবে ব্যবহার করে সর্বোচ্চ উৎপাদন/ভোগ করা যায়, তাই নিয়েই অর্থনীতির আলোচনা। উদাহরণ দিচ্ছি আমার নিজের গবেষণা থেকে। আমার স্পেশালাইজেশন "এনভায়রনমেন্টাল ইকনমিক্স"। আমার পিএইচডি থিসিসে আমি কিভাবে সরকারি পলিসির কারণে মানুষ পরিবেশের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ বা লাভবান হয়, তা নিয়ে আলোচনা করা। আমি ডাটা থেকে বের করার চেষ্টা করি যে কোনও একটি পরিবেশজনিত পলিসি দ্বারা মানুষের ভালোমন্দ কিছু এফেক্ট হয় কিনা। আমার কাজ পুরোই তথ্যভিত্তিক - এপ্লাইড ইকনমিক্স যেটাকে বলে।
অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রের কাজ হচ্ছে মানুষ এবং সমাজের উন্নয়ন, গঠন এবং কাঠামো নিয়ে আলোচনা করা। বোঝার চেষ্টা করা মানুষ কেন ইন্টারেক্ট করে, কিভাবে করে, বৈষম্য কিভাবে কাজ করে সমাজে, বিভিন্ন উন্নয়নের ফলে সমাজে কি পরিবর্তন হয় ইত্যাদি। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা যেমন অপরাধ বেড়ে যাওয়া, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বেড়ে যাওয়া, নারী-পুরুষের বৈষম্যের কারণে কি কি সমস্যা তৈরি হয় - এই নিয়েও সমাজবিজ্ঞান কাজ করে। এরপরে, পলিটিক্যাল সায়েন্সের কাজ হচ্ছে রাষ্ট্র, স্টেট, লোকাল ইত্যাদি সব লেভেলের রাজনৈতিক ইন্টারেকশন নিয়ে কাজ করা। একটা বিশাল অংশ মূলত পার্টিশান ইনভলভমেন্ট নিয়ে কাজ করে। আবার, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন মূলত রাষ্ট্রে বিভিন্ন এফেয়ার কিভাবে ব্যবস্থা করা হবে, পাবলিক পলিসি কিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এই নিয়ে আলোচনা করে। অন্যান্য স্যোশাল সায়েন্সের বিশাল অংশ মূলত সমাজবিজ্ঞান এর থেকে বের হয়ে তৈরি হওয়া স্পেশালাইজেশন।
অনেকক্ষেত্রেই মনে হতে পারে, ইকনমিক্স, স্যোশিওলজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স এর অনেক গবেষণাক্ষেত্রই একে অপরের সাথে জড়িত। এর কারণটা সোজা, সমাজ অবিচ্ছিন্ন একটা কাঠামো - স্যোশাল সায়েন্স এর বিভিন্ন অংশকেই বোঝার চেষ্টা করে। তাই, আমার কারেন্ট ইকনমিক্সে প্রজেক্টে যখন আমি ভোটিং বিহেভিয়ার বোঝার চেষ্টা করছি, তখন একে ইকনমিক্স বা পলিটীক্যাল সায়েন্স দুইদিকেই প্লেস করা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু, এই প্রতিটি সাবজেক্টের আলাদা আলাদা Toolbox আছে। আমি যখন মূলত ইকনমিক্সের Toolbox ব্যবহার করবো, তখন একে মূলত ইকনমিক্স বলা হবে। আর এই Toolbox এ কি কি আছে, সেটাই শেখানো হয় এই সাবজেক্টগুলোতে। যেমন, ইকনমিক্স অন্যান্য স্যোশাল সায়েন্সের থেকে অনেক বেশি কোয়ান্টিটেটিভ। ম্যাথ এবং পরিসংখ্যানের বিশাল ব্যবহার ইকনমিক্সে করা হয়, যেটা অন্যান্য স্যোশাল সায়েন্সে কম। ক্যারিয়ারক্ষেত্রেও এই সাবজেক্টগুলোর অনেক ওভারল্যাপ আছে।
সামাজিক বিজ্ঞানের বিভাগগুলোর শর্ট ইন্ট্রোডাকশনের পর স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রদের প্রশ্ন আসবে - এইসব বিষয়ে পড়ে কি কি ক্যারিয়ার চয়েস সামনে খোলা থাকবে? জীবনের একটা বিশাল অংশ জুড়েই থাকবে "কাজ", সেই কাজের আনন্দের জন্য একটা যুতসই ক্যারিয়ার খুব জরুরি। ক্যারিয়ার হওয়া উচিত এমন একটা কাজ যা প্রতিদিন নতুন কিছু শেখাবে, যা করতে ভালো লাগবে। দেখা যাক, স্যোশাল সায়েন্স আমাদের কি কি ক্যারিয়ারের দিকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে স্যোশাল সায়েন্সে কাজের ক্ষেত্রগুলো নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করছি।
প্রথমত, একাডেমিকঃ বিশ্ববিদ্যালয়-লেভেলে শিক্ষকতা করা যায়। এর জন্য দেশে কেবল অনার্স বা মাস্টার্স লাগে। কিন্তু বাইরের দেশগুলোতে পিএইচডি এবং আরও বেশি (পোস্টডক) থাকা লাগে। পাবলিকেশনের প্রয়োজন হয়।
দ্বিতীয়ত, ডেভেলপমেন্ট সেক্টরঃ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএনডিপি ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্যোশাল সায়েন্সের বিভিন্ন সেক্টরের মানুষের ডিমান্ড অনেক বেশি। এইসব চাকরির ক্ষেত্রেও বেশিরভাগ সময়েই পিএইচডি প্রয়োজন হবে। কিছু জুনিয়র লেভেলে শুধু মাস্টার্স যথেষ্ট।
তৃতীয়ত, এনজিও সেক্টরঃ দেশে এবং বাইরে এনজিও সেক্টরে কনসালটেন্সি করা অনেকেরই প্রথম পছন্দ থাকে। প্ল্যানিং বিষয়ক অন্যান্য চাকরিতেও স্যোশাল সায়েন্সের অনেক ডিমান্ড।
চতুর্থত, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিঃ ফাইন্যান্সিয়াল এনালিস্ট ধরণের অনেক জবে ইকনমিস্টদের ডিমান্ড থাকে।
পঞ্চম, ব্যাংকিংঃ সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকিং সেক্টরে ইকনমিক্সের ছাত্রদের ডিমান্ড অনেক বেশি।
ষষ্ঠঃ সরকারি চাকরি: সরকারি চাকরি এবং আধা-সরকারি চাকরিতে স্যোশাল সায়েন্সের অনেক ছাত্রই যায়। বাংলাদেশের অনেক নামকরা স্যোশাল সায়েন্টিস্টই সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, এবং পাবলিক পলিসিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
সপ্তম, ইন্ডাস্ট্রি জবঃ ইন্ডাস্ট্রিতে জব করা অনেকেরই প্রধান লক্ষ্য থাকে। ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসেবেও অনেকে কাজ করতে পছন্দ করেন।